একটি দেশের জিডিপি নির্ভর করে সেই দেশের ভূমি, প্রাকৃতিক সম্পদ, শ্রম, মূলধন ও প্রযুক্তি ইত্যাদি সম্পদের পরিমাণ এবং উৎপাদনশীলতার উপর
এসএসসি ২০২১ শিক্ষাবর্ষের মানবিক বিভাগের সুপ্রিয় শিক্ষার্থীরা, আশা করছি তোমরা খুবই ভালো আছো। সম্প্রতি তোমাদের এসএসসি ২০২১ এর ৭ম সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট প্রকাশিত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা নিয়ে এসেছি তোমাদের জন্য বাছাইকরা নমুনা উত্তরটি; যেটি অনুসরণের মাধ্যমে তোমাদের সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্তির প্রত্যাশা করছি। আজকের আলোচনায় রয়েছে এসএসসি ২০২১ ৭ম সপ্তাহের অর্থনীতি অ্যাসাইনমেন্টের বাছাইকরা নমুনা উত্তর- একটি দেশের জিডিপি নির্ভর করে সেই দেশের ভূমি, প্রাকৃতিক সম্পদ, শ্রম, মূলধন ও প্রযুক্তি ইত্যাদি সম্পদের পরিমাণ এবং উৎপাদনশীলতার উপর।
এসএসসি ২০২১ ৭ম সপ্তাহের অর্থনীতি অ্যাসাইনমেন্টের বাছাইকরা নমুনা উত্তর-
অ্যাসাইনমেন্ট : “একটি দেশের জিডিপি নির্ভর করে সেই দেশের ভূমি, প্রাকৃতিক সম্পদ, শ্রম, মূলধন ও প্রযুক্তি ইত্যাদি সম্পদের পরিমাণ এবং উৎপাদনশীলতার উপর”- উক্ত তথ্যের আলোকে বাংলাদেশের মোট জিডিপি পরিমাপের পদ্ধতি গুলোর ব্যাখ্যা সহ মাথাপিছু জিডিপি পরিমাপের সূত্রটি উদাহরণসহ উপস্থাপন।
নির্দেশনা সংকেত ধাপ/ পরিধি) :
- জিডিপির সংজ্ঞা ব্যাখ্যা
- জিডিপি পরিমাপের পদ্ধতি বর্ণনা
- বাংলাদেশের জিডিপি পরিমাপের পদ্ধতি বর্ণনা
- সূত্রের সাহায্যে মাথাপিছু জিডিপি নির্ণয়
ক) পাঠ্যপুস্তক অনুসারে জিডিপি এর সংজ্ঞা প্রদানঃ
জাতীয় আয়ের ধারণাসমূহ (মোট দেশজ উৎপাদন)
GDP-র পুরো অর্থ “Gross Domestic Product” বা “মোট দেশীয় পন্য”। GDP-র সাহায্য কোনো দেশের অর্থনীতির অবস্থা বুঝতে পারা যায়। দেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রে GDP একটি সূচক হিসেবে কাজ করে। একটি নির্দিষ্ট সময়ে সাধারণত এক বছরে একটি দেশের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে মোট যে পরিমাণ চূড়ান্ত দ্রব্য ও সেবা উৎপাদিত হয়, তার বাজার দামের সমষ্টিকে মোট দেশজ উৎপাদন বা GDP বলে।
মনে করি, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বছরে তিনটি দ্রব্য উৎপাদিত হয়। যেমন ১০০ কুইন্টাল ধান, ১০০০ জামা এবং ১০০০ কলম উৎপাদিত হয়। জিডিপি = ১০০ কুইন্টাল ধান প্রতি কুইন্টাল ধানের বাজার দাম + ১০০০ জামা প্রতিটি জামার বাজার দাম + ১০০০ কলম প্রতিটি কলমের বাজার দাম। এভাবে কোনো দেশে উৎপাদিত সকল দ্রব্যের পরিমাণকে নিজ নিজ দাম প্রতি এককের দ্বারা গুণ করে তার সমষ্টি বের করে জিডিপি নির্ণয় করা হয়। তবে ধান থেকে যদি চূড়ান্ত দ্রব্য হিসাবে চাল তৈরি হয়, তাহলে আমাদেরকে হিসাবের সময় ধানের বদলে চাল উৎপাদন এবং চালের দামকে হিসাবে নিতে হবে।
মোট জাতীয় আয় (Gross National Income বা GNI)
কোনো নির্দিষ্ট সময়ে সাধারণত আর্থিক বছরে কোনো দেশের নাগরিকগণ কর্তৃক যে পরিমাণ চূড়ান্ত দ্রব্য ও সেবা উৎপন্ন হয় তার বাজার মূল্যের সমষ্টিকে মোট জাতীয় আয় (GNI) বলে । মোট দেশজ উৎপাদনের সাথে নিট উপাদান আয় যোগ করে মোট জাতীয় আয় পাওয়া যায়। নিট উপাদান আয় বলতে একটি দেশের নাগরিকগণ বৈদেশিক বিনিয়োগ ও শ্রম থেকে যে আয় করে এবং বিদেশি নাগরিকগণ আলোচ্য দেশে বিনিয়োগ ও শ্রম থেকে যে আয় করে এ দুয়ের বিয়োগ ফলকে বোঝায়। এই পরিমাণটি ঋণাত্মক হলে মোট জাতীয় আয় মোট দেশজ আয়ের চেয়ে কম হবে। আর এটি যদি ধনাত্মক হয়, তাহলে মোট জাতীয় আয় মোট দেশজ আয়ের চেয়ে বেশি হবে। বাংলাদেশে বর্তমানে দ্বিতীয়টিই সত্য।
নিট জাতীয় আয় (Net National Income বা NNI)
কোনো দেশের মোট জাতীয় আয় থেকে মূলধন ব্যবহারজনিত অবচয় পুরণের ব্যয় (Capital Consumption Allowance Depreciation) বাদ দিলে যা থাকে তাকে নিট জাতীয় আয় বলে। মূলধন ব্যবহারজনিত অবচয় ব্যয় বলতে উৎপাদন ব্যবস্থায় মূলধনের ব্যবহারজনিত যে ক্ষয় হয়, তা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যে ব্যয় বহন করতে হয়, তাকে বোঝায়।
উদাহরণ (Example) :
এখানে GDP-র উদাহরণ দেওয়ার জন্য America-র কথা ধরে নিলাম।
ধরি,কোনো এক বছরে America তে মোট 100kg চাল উৎপাদন হয়, প্রতি কেজি চালের বাজার মূল্য 2USD। ওই বছরেই America-তে আরও 200kg গম উৎপাদন হলো এবং প্রতি কেজি গমের বাজার মূল্য 3USD।
সুতরাং, ওই বছরে America-র জিডিপি হবে,
= (100×2)+(200×3)
= 800 USD
এবার ধরুন, ওই বছরে পুরো America-র মোট প্রয়োজন যথাক্রমে 150Kg চাল এবং 250Kg গম। তাই প্রয়োজন মেটাতে America বিদেশ থেকে 3USD/Kg দরে 50Kg চাল এবং 4USD/Kg দরে 50Kg গম আমদানি করলো।
তাহলে ওই বছর America-র চূড়ান্ত GDP হবে,
= 800 – {(50 × 3) + (50 × 4)}
= 450 USD
সুতরাং, আশা করি বুঝতে পারলেন যে, দেশের GDP শুধু দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদিত পণ্যের বাজার দরের উপর নির্ভর করে না, বরং অনেকটাই বিদেশ থেকে আমদানি পণ্যের উপরে ও নির্ভর করে। এটা হলো GDP নির্ণয়ের একদম সরলীকৃত উদাহরণ।
খ) জিডিপি পরিমাপের তিনটি পদ্ধতিঃ
জিডিপি পরিমাপে সাধারণত তিনটি পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এগুলো হলো আয় পদ্ধতি, ব্যয় পদ্ধতি এবং উৎপাদন পদ্ধতি। এসকল পরিমাপের ক্ষেত্রে একটি জিডিপির পরিমান নির্ধারণ করা হয়। নিচে তিনটি পরিমাপ পদ্ধতির সংক্ষিপ্ত ধারণা উপস্থাপন করা হল।
আয় পদ্ধতি
একটি দেশের পণ্য এবং সেবা উৎপাদনে বিভিন্ন রকম উপাদান ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এসকল উপাদানকে মূলত চারটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। এগুলো হলো ভূমি, শ্রম, মূলধন এবং শিল্পোদ্যোগ। দেশের সকল পণ্য এবং সেবা তৈরীর উপকরণ এই চারটি শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। তাই এসকল উপকরণ বিক্রয় অথবা ব্যবহার হতে প্রাপ্ত আয়ের সমষ্টিকে নীট জাতীয় আয় হিসেবে অভিহিত করা হয়। তথাপি, ভূমি হতে প্রাপ্ত ভাড়া, শ্রম হতে প্রাপ্ত মজুরি, মূলধন হতে প্রাপ্ত লাভ বা সুদ এবং শিল্পোদ্যোগ হতে প্রাপ্ত মুনাফার সমষ্টিই হল নীট জাতীয় আয়। এই নীট জাতীয় আয়ের সাথে মূলধনের অবচয় এবং নীট বৈদেশিক উপাদান হতে আয় যোগ করার মাধ্যমে আমরা জিডিপি নির্ণয় করতে পারি। নিন্মোক্ত সমীকরণের মাধ্যমে আয় পদ্ধতিতে জিডিপির পরিমাপ করা যায়।
ব্যয় পদ্ধতি
ব্যয় পদ্ধতিতে সকল প্রকার ক্রেতা কর্তৃক ক্রয় করা সকল পণ্য ও সেবার বিপরীতে ব্যয় করা অর্থের পরিমান নির্ধারণ করা হয়ে থাকে
এ পদ্ধতিতে পূর্বের পদ্ধতির মতো আয়ের হিসাব করার পরিবর্তে জিডিপি পরিমাপে ব্যয়ের হিসাব করা হয়। এক্ষেত্রে, সকল প্রকার ক্রেতা কর্তৃক ক্রয় করা ভোক্তা কর্তৃক দৈনন্দিন জীবনে প্রতিনিয়ত ব্যবহৃত পণ্য এবং সেবার জন্য ব্যয়, বিনিয়োগ ব্যয় এবং সরকার কর্তৃক ব্যয়। এই ব্যায়সমূহের সাথে নীট রপ্তানি যোগ করে আমরা জিডিপি নির্ণয় করতে পারি। ব্যয় পদ্ধতিতে জিডিপি নির্ধারণের ক্ষেত্রে নিচের সমীকরণটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
উৎপাদন পদ্ধতি
একটি দেশে উৎপাদিত সকল পণ্য এবং সেবার মোট বাজার মূল্যকে একত্রিত করার মাধ্যমে উৎপাদন পদ্ধতিতে জিডিপি নির্ধারণ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে উৎপাদন এর বিভিন্ন ধাপে সংযোজিত মূল্যমান হতে প্রাপ্ত চুড়ান্ত পণ্যমূল্য টিকেই জিডিপি নির্ণয়ে ব্যবহার করা হয়। উৎপাদন পদ্ধতিতে জিডিপি পরিমাপ করার ক্ষেত্রে উৎপাদনকে তিনটি বৃহৎ ভাগে ভাগ করে হয়ে থাকে। এগুলো হলো কৃষিকাজ হতে উৎপাদন, সেবা হতে উৎপাদন এবং শিল্প হতে উৎপাদন। উৎপাদন পদ্ধতিতে জিডিপি নির্ণয়ের সমীকরণটি নিম্নরূপ-
উৎপাদিত সকল পণ্য এবং সেবার মোট বাজার মূল্যকে একত্রিত করে জিডিপি নির্ধারণ করা যেতে পারে।
গ) বাংলাদেশে মোট দেশজ আয় পরিমাপ পদ্ধতি (Method of Estimation of GDP in Bangladesh)
বাংলাদেশে জিডিপি গণনার দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রতি বছর চলতি বাজার মূল্য ও স্থির মূল্যে দ্রব্য ও সেবার মূল্য পরিমাপ করে জিডিপি গণনা করে থাকে। এসব হিসাব করতে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে থাকে ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো উৎপাদন পদ্ধতি ও ব্যয় পদ্ধতি ব্যবহার করে জিডিপি ও জিএনআই গণনা করে । উৎপাদন পদ্ধতিতে মোট দেশজ উৎপাদন (GDP) পরিমাপের জন্য অর্থনীতিকে মোট ১৫টি প্রধান খাতে বিভক্ত করা হয়। খাতসমূহ হচ্ছে-
১. কৃষি ও বনজ সম্পদ : কৃষি দেশজ উৎপাদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। এ খাত ধরাবাধাভাবে হিসাব করা কঠিন। বাংলাদেশে GDP গণনা করতে এ খাতকে তিনটি উপখাতে বিভক্ত করা হয় ।
- (ক) শস্য ও শাকসবজি এ খাতে দেশজ উৎপাদনের পরিমাণ চলতি পাইকারি বাজারমূল্যের পরিপ্রেক্ষিতে হিসাব করা হয়। যেমন- ২০১৭-১৮ সালে ছিল ১৫৯১৭১ কোটি টাকা এবং ২০১৮-১৯ সালে ১৭১৩০৮ কোটি টাকা।
- (খ) প্রাণিসম্পদ এ খাতের হিসাবও চলতি বাজার মূল্যের পরিপ্রেক্ষিতে দেশজ উৎপাদনের পরিমাণ হিসাব করা হয়। প্রাণি সম্পদ উপখাতে ২০১৭-১৮ সালে দেশজ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৩৯৬২৫ কোটি টাকা এবং ২০১৮-১৯ সালে ৪৩২১২ কোটি টাকা।
- (গ) বনজ সম্পদ বন খাতের উপকরণের তথ্যের অভাবে মোট উৎপাদন হতে ৩% মূল্য বাদ দিয়ে যা থাকে, তাকে মূল্য সংযুক্তি হিসেবে বিবেচনা করে GDP বের করা হয়। ২০১৭-১৮ সালে দেশজ উৎপাদন ছিল ২৮৫৫৭ কোটি টাকা এবং ২০১৮-১৯ সালে ৩১৭৪৭ কোটি টাকা।
একটি দেশের জিডিপি নির্ভর করে সেই দেশের ভূমি, প্রাকৃতিক সম্পদ, শ্রম, মূলধন ও প্রযুক্তি ইত্যাদি সম্পদের পরিমাণ এবং উৎপাদনশীলতার উপর।
২. মৎস্য সম্পদ : অভ্যন্তরীণ ও সামদ্রিক উৎস থেকে মোট মৎস্য আহরণের প্রেক্ষিতে মোট দেশজ উৎপাদনের হিসাব করা হয়। এখাতে ২০১৭-১৮ সালে মোট দেশজ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৬৬৮৮২ কোটি টাকা এবং ২০১৮-১৯ সালে ৭৪৮২৮ কোটি টাকা ।
৩. খনিজ ও খনন : শিল্প খাতের মধ্যে খনিজ ও খননকে আলাদা খাত হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। এ খাতে (ক) প্রাকৃতিক গ্যাস ও অপরিশোধিত তেল এবং (খ) অন্যান্য খনিজ সম্পদ ও খনন বিষয়ের উৎপাদিত পণ্যের বাজারমূল্যের হিসাব করা হয়। এসব খাতের হিসাব দেশজ উৎপাদনের দিক থেকে গণনা করা হয়। ২০১৭-১৮ সালে এ খাতে আয় হয় ৩৮৮৮৪ কোটি টাকা এবং ২০১৮-১৯ সালে হিসাব করা হয়েছিল ৪৪০৩৯ কোটি টাকা।
৪. শিল্প (ম্যানুফেকচারিং): বাংলাদেশে মোট দেশজ উৎপাদন গণনার ক্ষেত্রে সকল শিল্পের উৎপাদিত পণ্যের বর্তমান বাজারমূল্য হিসাব করে মোট দেশজ উৎপাদন বের করা হয়। বাংলাদেশে শিল্প উৎপাদনের পরিমাণ ২০১৭-১৮ সালে শিল্প উৎপাদন বৃহৎ ও মাঝারি শিল্প উৎপাদন এবং ক্ষুদ্র শিল্প উৎপাদন যথাক্রমে ৩৩২৫৯৪ কোটি টাকা এবং ৭১৫৫১ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ সালে শিল্প উৎপাদন বৃহৎ ও মাঝারি শিল্প উৎপাদন এবং ক্ষুদ্র শিল্প উৎপাদন যথাক্রমে ৩৯৯৮৬০ কোটি টাকা, ৮২১৮৮ কোটি টাকা।
৫. নির্মাণ : নির্মাণ খাত থেকে মোট দেশজ উৎপাদনের পরিমাণ হিসাব করা হয় ব্যক্তি, নির্মাণ প্রতিষ্ঠান, ভোক্তা এবং সরকারের প্রাপ্ত তথ্য থেকে বাস্তবে এ খাত থেকে যে পরিমাণ আয় হিসাব হওয়ার কথা তার তুলনায় কম হয়। কারণ চলতি বাজারমূল্য সরকার প্রদত্ত বেঁধে দেয়া মূল্য থেকে বেশি ।
৬. পাইকারি ও খুচরা বিপণন এ হিসাবে পণ্যের পাইকারি মূল্য হিসাবের মাধ্যমে মোট দেশজ উৎপাদনের পরিমাণ গণনা করা হয়। ২০১৭-১৮ সালে ২৭৯৮২৩ কোটি টাকা এবং ২০১৮-১৯ সালে ৩১১২০৪ কোটি টাকা হিসাব করা হয়।
একটি দেশের জিডিপি নির্ভর করে সেই দেশের ভূমি, প্রাকৃতিক সম্পদ, শ্রম, মূলধন ও প্রযুক্তি ইত্যাদি সম্পদের পরিমাণ এবং উৎপাদনশীলতার উপর।
৭. বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানিসম্পদ এ খাতে সেবা সরবরাহ মূল্যের পরিপ্রেক্ষিতে মোট দেশজ উৎপাদন মূল্য হিসাব করা হয়। বাংলাদেশের জন্য এই খাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের পাশাপাশি এ খাতসমূহ বেসরকারিভাবেও ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ২০১৭-১৮ সালে মোট দেশজ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ২৯৩৩৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে-
- (ক) বিদ্যুৎ উপখাতে ২২৭২৮ কোটি টাকা।
- (খ) গ্যাস উপখাতে ৫১৯৬ কোটি টাকা এবং
- (গ) পানি উপখাতে ১৪১২ কোটি টাকা আয় হয়। ২০১৮-১৯ সালে এ তিনটি খাতের সমষ্টি ৩২৫৪১ কোটি টাকা।
অথচ সরকারি বেঁধে দেয়া মূল্যের পরিপ্রেক্ষিতে মোট দেশজ উৎপাদনের পরিমাণ হিসাব করা হয়। ২০১৭-১৮ সালে এ খাত থেকে আয় হয় ১৬৯৮৫৫ কোটি টাকা এবং ২০১৮-১৯ সালে ১৯৬৬৫৬ কোটি টাকা। হোটেল ও রেস্তোরাঁ এই খাতের মোট দেশজ উৎপাদনের বিষয়টি উৎপন্ন দ্রব্যের ও সেবার বিক্রয় মূল্যের প্রেক্ষিতে হিসাব করা হয়। ২০১৭-১৮ সালে এ খাত থেকে আয় হয় ২২১২৩ কোটি টাকা এবং ২০১৮-১৯ সময়ে ২৫২৮০ কোটি টাকা।
৮. পরিবহণ, সংরক্ষণ ও যোগাযোগ : এ খাত দেশজ আয় গণনার একটি বড় খাত। এ খাতটির বড় অংশ বেসরকারি হাতে ন্যাস্ত আছে। তারপরও ২০১৭-১৮ সালে স্থুল আয় হয়েছিল মোট ২০৪৬৩০ কোটি টাকা যার মধ্যে
- (ক) স্থল পথ পরিবহন উপখাতে ১৫৭০৩৮ কোটি টাকা,
- (খ) পানি পথ পরিবহন উপখাতে ১১৬৯৮ কোটি টাকা,
- (গ) আকাশ পথ পরিবহন উপখাতে ১৪৭৬ কোটি টাকা,
- (ঘ) সহযোগী পরিবহন সেবা ও সংরক্ষণ উপখাতে ৯৭০৬ কোটি টাকা এবং
- (ঙ) ডাক ও তার যোগাযোগ খাতে ২৪৭১৩ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ সময়ে পরিবহন, সংরক্ষণ ও যোগাযোগ খাতে মোট আয় হয় ২২৫৪৩৮ কোটি টাকা।
৯. কমিউনিটি, সামাজিক ও ব্যক্তিগত সেবা এ খাতে ব্যয়ের দিক থেকে মোট দেশজ উৎপাদণ গণনা করা হয় । ২০১৭-১৮ সালে এ খাত থেকে ২৩৬৩৭৮ কোটি টাকা ব্যয় গণনা করা হয় এবং ২০১৮-১৯ বছরে ২৬০৫৯১ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছিল ।
একটি দেশের জিডিপি নির্ভর করে সেই দেশের ভূমি, প্রাকৃতিক সম্পদ, শ্রম, মূলধন ও প্রযুক্তি ইত্যাদি সম্পদের পরিমাণ এবং উৎপাদনশীলতার উপর।
১০. আর্থিক প্রাতিষ্ঠানিক সেবা এ খাতের হিসাব করা হয় সেবা থেকে প্রাপ্ত মূল্যের ভিত্তিতে । ২০১৭-১৮ সময়ে এ খাত থেকে দেশজ উৎপাদন মূল্যের পরিমাণ ছিল ৮৩৭২৮ কোটি টাকা, যার মধ্যে-
- (ক) ব্যাংক উপখাতে ৭১৭৫৪ কোটি টাকা
- (খ) বিমা উপখাতে ৭৩৪১ কোটি টাকা এবং
- (গ) অন্যান্য খাত থেকে আয় হয় ৪৬৩৩ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট ৯৪২৬৫ কোটি টাকা আয় হয়। উপখাত অনুযায়ী এ আয় যথাক্রমে ৮১৪২০, ৭৫০৪ ও ৫৩৪১ কোটি টাকা ।
১১. রিয়েল এস্টেট, ভাড়া ও অন্যান্য ব্যবসা এ খাত থেকে দেশজ উৎপাদনের পরিমাণ হিসাব করা হয় সেবা থেকে প্রাপ্ত আয়ের পরিমাপের ভিত্তিতে। ২০১৭-১৮ সালে এ খাত হতে প্রাপ্ত দেশজ আয় ছিল ১৬৬৪১৯ কোটি টাকা এবং ২০১৮-১৯ সময়ে ১৮৬৮৪৯ কোটি টাকা।
১২. লোকপ্রশাসন ও প্রতিরক্ষা এ খাত থেকে প্রাপ্ত দেশজ আয়ের হিসাব করা হয় মূলত ব্যয়ের দিক থেকে। ২০১৭-১৮ সালে দেশজ উৎপাদণ ছিল ৯০২২৮ কোটি টাকা এবং ২০১৮-১৯ সালে ১০০১২০ কোটি টাকা।
১৩. শিক্ষা বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে মোট দেশজ উৎপাদন হিসাব করা হয় ব্যয়ের দিক থেকে। ২০১৭-১৮ সালে কোটি টাকা। । খাতে দেশজ উৎপাদন ছিল ৬৪৪৭৮ কোটি টাকা এবং ২০১৮-১৯ সালে ৭২৩০৮
১৪. স্বাস্থ্য ও সামাজিক সেবা স্বাস্থ্য ও সেবা খাতের বিষয়টি হিসাব করা হয় ব্যয় পদ্ধতিতে। এক্ষেত্রে মোট দেশজ উৎপাদন ব্যয় ২০১৭-১৮ সময়ে হয়েছিল ৪৪০৬৪ কোটি টাকা এবং ২০১৮-১৯ সময়ে ব্যয় ৫০০৫৬ কোটি টাকা ।
ঘ) সূত্রের সাহায্যে মাথাপিছু জিডিপি নির্ণয়ঃ
মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদন (Per Capita Gross Domestic Product)
মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদন জিডিপি বলতে জনপ্রতি বার্ষিক জিডিপিকে বোঝায়। কোনো নির্দিষ্ট আর্থিক বছরে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনকে উক্ত বছরের মধ্য সময়ের মোট জনসংখ্যা দ্বারা ভাগ করলেই মাথাপিছু জিডিপি পাওয়া যায় । সূত্রাকারে, মাথাপিছু জিডিপি = কোনো নির্দিষ্ট বছরে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ÷ ঐ বছরের মধ্য সময়ের মোট জনসংখ্যা।
একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জীবনযাত্রার মানের গড় প্রধান সূচকই হলো মাথাপিছু জিডিপি। বিশ্বব্যাংকের ধ্যানধারণা অনুসারে এ সূচক দ্বারা দেশটি কি উন্নত নাকি অনুন্নত বা উন্নয়নশীল তা নির্ণয় করা যায়। যদি মাথাপিছু জিডিপি একটি নির্দিষ্ট স্তরের বেশি হয় তবে বুঝতে হবে দেশটি উন্নত, আর যদি তা থেকে কম হয়। তবে বুঝতে হবে দেশটি অনুন্নত বা উন্নয়নশীল । তবে বর্তমানে এ ভাবে না দেখে উচ্চ আয়ের দেশ, মধ্যম আয়ের দেশ এবং নিম্ন আয়ের দেশ হিসাবে দেখার রীতি চালু হয়েছে।
জিডিপির নির্ধারকসমূহ (Determinants of Gross Domestic Product-GDP)
মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) কত হবে তা নির্ভর করে দেশের ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদ, শ্রম, মূলধন, প্রযুক্তি, এসব সম্পদের পরিমাণ ও উৎপাদনশীলতার উপর। এ জন্য এদেরকে মোট দেশজ উৎপাদনের নির্ধারক বলা হয়।
১. ভূমি (Land) : মোট দেশজ উৎপাদন ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নির্ভর করে। প্রাকৃতিক সম্পদের পর্যাপ্ত ব্যবহার সম্ভব হলে এবং কৃষিপণ্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় উর্বর ভূমি থাকলে দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। ফলে ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদ মোট দেশজ উৎপাদনের গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক।
২. শ্রম (Labour) : যেকোনো দেশের শ্রম মোট দেশজ উৎপাদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক। দক্ষ ও কর্মক্ষম শ্রম মোট দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধির সহায়ক। শ্রমিকের সংখ্যা যদি বাড়ে এবং সে যদি প্রযুক্তির ব্যবহার জানে এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়, তবে মোট দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধির সহায়ক হয় ।
৩. মূলধন (Capital) : মূলধন মোট দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক নির্ধারক। আজকের উন্নত দেশসমূহে মোট দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধির মূলে মূলধন কাজ করে। আবার অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশসমূহ মূলধনের অভাবের কারণে মোট জাতীয় আয় ও মোট দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারে না। সুতরাং মূলধন মোট দেশজ উৎপাদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক।
একটি দেশের জিডিপি নির্ভর করে সেই দেশের ভূমি, প্রাকৃতিক সম্পদ, শ্রম, মূলধন ও প্রযুক্তি ইত্যাদি সম্পদের পরিমাণ এবং উৎপাদনশীলতার উপর।
৪. প্রযুক্তি (Technology) প্রযুক্তির উপর মোট দেশজ উৎপাদন বহুলাংশে নির্ভর করে। প্রযুক্তির উন্নয়ন নানাভাবে হতে পারে। যেমন নতুন আবিষ্কার, যন্ত্রপাতির ডিজাইন ও দক্ষতার উন্নতি, নতুন মালামালের আবিষ্কার ইত্যাদি। উদাহরণস্বরূপ, কৃষি খাতে চিরায়ত বীজের পরিবর্তে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) বীজ ব্যবহার করে ধানের উৎপাদন বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। একইভাবে উন্নত জাতের বীজ ব্যবহার করে লাউ, কুমড়া, ঢেঁড়স ইত্যাদি সবজির উৎপাদনও বেড়েছে। প্রযুক্তি মূলত উৎপাদন উপকরণের উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে একই সমান উৎপাদন উপকরণ দিয়ে অধিক উৎপাদন সম্ভব হয়।
৫. সচলতা (Mobility) : একটি অর্থনীতিতে পিছিয়ে পড়া বা অবনতিশীল অর্থনৈতিক কার্যকলাপ থেকে সম্পদ সরিয়ে নতুন প্রসারমাণ অর্থনৈতিক কার্যকলাপে সম্পদ ব্যবহার করার ক্ষমতার উপর মোট দেশজ উৎপাদন নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ বাংলাদেশে পাট চাষ কমিয়ে ধান, গম বা ভুট্টা চাষে ভূমি ও অন্যান্য উপকরণের ব্যবহার বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করা যায়। উদাহরনঃ ধরি, কোনো একটি দেশে এক বছরের মোট দেশজ উৎপাদন ১০০০ কোটি টাকা এবং ঐ বছরের মোট জনসংখ্যা ৩০ কোটি হলে।
তাহলে, ঐ বছরের মাথাপিছু জিডিপিঃ (মোট দেশজ উৎপাদন÷মোট জনসংখ্যা)
সুতরাং,মাথাপিছু জিডিপি=(১০০০÷৩০)কোটি
=৩৩.৩কোটি।
এই ছিল তোমাদের এসএসসি ২০২১ ৭ম সপ্তাহের অর্থনীতি অ্যাসাইনমেন্টের বাছাইকরা নমুনা উত্তর- একটি দেশের জিডিপি নির্ভর করে সেই দেশের ভূমি, প্রাকৃতিক সম্পদ, শ্রম, মূলধন ও প্রযুক্তি ইত্যাদি সম্পদের পরিমাণ এবং উৎপাদনশীলতার উপর।
এসএসসি ২০২১ ৭ম সপ্তাহের অন্যান্য অ্যাসাইনমেন্টের উত্তর দেখুন-
আরো দেখুন-
প্রতি সপ্তাহে সকল স্তরের অ্যাসাইনমেন্ট সংক্রান্ত সকল তথ্য পাওয়ার জন্য বাংলা নোটিশ এর ফেসবুক পেজটি লাইক এবং ফলো করে রাখুন ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন এবং প্লেস্টোর থেকে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটি ডাউনলোড করে রাখুন।